মহাকালের লুঠ

প্রবুদ্ধ মিত্র

এক

-লুঠ ?
- হ্যাঁ লুঠ। এ বিষয়ে শেষ কবে খবর হয়েছে কিছু জানেন ?
অনেক ভেবেও মাথায় আনতে পারলো না কেউ। মনে পড়ল না শেষ লুঠের খবর। শেষে মাথা নেড়ে সবাই জানালো-
-ঠিক মনে পড়ছে না।
অবশেষে লুঠ বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান ও তর্ক শুরু হয়ে গেল। প্রথমে চায়ের টেবিলে, পরে পাড়া, অঞ্চল, সাব ডিভিশন, জেলা, শহর এবং রাজ্যে। আদালত এবং গণমাধ্যমে ব্যাপারটা আদৌ গুরুত্ব না পাওয়ায় গোটা দেশে লুঠের খবর ছড়াতে কান ও চোখের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল বেশ কয়েক মাস।
সকলে একদিন মনে করতে চেষ্টা করল লুঠ সম্পর্কে তাদের পূর্বাভিজৠঞতা। বহুদিন বিস্মৃত হয়েছে সেই লুঠ, যা খবরে এসেছিল। ধন নয়, দৌলত নয় লুঠ হয়েছিল এক টুকরো আকাশ। যা ছিলো তাদের সকলের। সেই এক খন্ড আকাশ আর ফিরে পাওয়া যায়নি। খন্ড আকাশের অনুপস্থিতঠতে সকলের জীবনে নেমে এসেছিল এক আকস্মিক অন্ধকার। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি কমে যাওয়ায় হঠাৎ অজানা ব্যধি গ্রাস করেছিল গোটা জাতিকে। ব্যাধির সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে সকলেই প্রায় কষ্টার্জিঠজয় নিশ্চিত করেছিল আস্তে আস্তে। শুধু মইদুল চাচা হারিয়ে গিয়েছিল। ব্যাধির সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে ফসলের জমি ছেড়ে সে উধাও হয় ভরদুপুরে। অনেক পরে জমির আল থেকে উদ্ধার হয় এক টুকরো কাগজ,যাতে লেখা ছিল 'আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী লুঠ হওয়া টুকরো আকাশ।' সকলে বিস্মিত হয় একথা ভেবে যে, এই চিঠি কে লিখল। মইদুলের কোনো লেখাপড়া ছিল না, সকলে জানতো। বিস্ময়ের আর একটা কারণ,চিঠি ও মইদুলের সম্ভাব্য আত্মহত্যাঠযোগসূত্র বিষয়ে সকলের মনে সন্দেহজনক প্রশ্নগুলৠজেগে উঠেছিল, এক অজ্ঞাত যাদুতে তা নিমেষে উধাও হয়ে গেল। আসলে,লুঠ সম্পর্কে মানুষের স্মৃতি লুপ্ত হতে বেশিদিন লাগেনি। লুপ্ত বা আর একটা লুঠ, যাই বলা হোক না কেন ! মইদুলের হারিয়ে যাওয়ার স্মৃতি লুঠ হয়েছিল। কেউ মনে রাখেনি।

সকলে একমত হল যে, লুঠ সম্পর্কে এটাই শেষতম খবর।


দুই

কয়েকশো বছর পর আজ আবার একটা ঘটনা সম্পর্কে লোকজনের উত্তেজনা ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে।
ঝলমলে শপিং মলে চলাফেরা করতে করতে শহরের আধুনিক ক্রেতারা ফুরফুরে মেজাজে চলন্ত সিঁড়িতে পা রেখে ঝকঝকে মেঝের সবকটা তলা কয়েক ঘন্টায় এমনভাবে নিষ্পেষিত করতে চায় যেন পরের দিন ছেলেমেয়ের স্কুলে অভিভাবক আড্ডায় মজে যেতে কোনো অসুবিধা না হয়। মল থেকে কি কি কেনাকাটায় কতটা লেটেস্ট হওয়া গেছে এবং এত কিছু করেও মল থেকে বের হবার পর তাদের মলদ্বার কেমন অটুট আছে এটা বাকি বাপ মায়েদের না বোঝানো অবধি তারা শান্ত হতে পারে না।
এরকম এক মলসন্ধ্যায় উজ্জল শো কেসে ক্রেতাদের চমকে দিল একটা ব্যাপার। সেটা হল এক আশ্চর্য বিনিময় ব্যবস্থা। গোদা বাংলা বা চালু কথায় ক্রেতারা এতদিন যাকে জেনে এসেছে 'এক্সচেঞ্জ অফার' বলে।
শো কেসের কাঁচের ওপর নীল এলইডি আলোয় পরিস্কার লেখা,' মাথা- পুরোনো বেচে নতুন ' !
এই চমৎকার বিজ্ঞাপন সন্ধের জমায়েত হওয়া সমস্ত ভিড় কে নিমেষে কাছে টেনে নিল ! পরের দিন স্কুলের à¦—à¦¾à¦°à§à¦œà§‡à¦¨à¦¦à§‡à ° গা গরম হতে কয়েক মূহুর্ত লাগল মাত্র।
আধুনিক বেঁচে থাকার শর্তই হল, পুরোনো বর্জন। তা সে যে বস্তুই হোক। এই একটা ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক বহুমত নেই। নেই কোনো শহর গ্রামের ফারাক। খবরটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। প্রথমে কফির টেবিল। পরে একে একে পাড়া, অঞ্চল, সাব ডিভিশন, জেলা, শহর এবং রাজ্যে। গণমাধ্যমেঠ° কৌশলে সকলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হল যে, পুরোনো হলে বেচে দেওয়াটা বা পাল্টে ফেলাটা কত জরুরি। সারা দেশকে যে মাথা বেচার নেশায় পেয়ে বসেছে তা গণমাধ্যম কৌশলে চেপে গেলেও অবিরত ফিসফাসে মোবাইলের পর্দায় ব্যাপারটা কয়েকদিনের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেল। বেচে দেওয়া মাথার পরিবর্তে নতুন যে মাথা তারা কিনছে তা বিস্ময়কর ভাবে একই। ভাবনা চিন্তা ও মতামত অবিকল এক। এটা যে একটা হিস্টিরিয়া জনিত রোগ এদেশের, তা বিদেশের নামি কাগজগুলোয় ফলাও করে প্রকাশ পেল। এই অদ্ভুত রোগ যখন গোটা দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে, তখনই সন্ধান পাওয়া গেল এক নিভৃতচারি বোকা মানুষের। সে এই ডামাডোল থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। পুরোনো বেচে নতুন কেনার আকর্ষণ দুর্দমনীয়, এটা তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমৠভাবে প্রযোজ্য হল না।
সে যখন সামনে এলো,à¦¸à¦‚à¦–à§à¦¯à¦¾à ¦—রিষ্ঠ প্রবল বৃহৎ শক্তি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিন্তু,à¦¤à¦¾à¦•à ‡ রাজি করানো গেল না। অনেক কষ্টে জানা গেল তার পরিচয়।
-নাম ?
-মৃদুল। পূর্ব নাম মইদুল।
-নিবাস ?
-তিনশো বছর আগে যা ছিল তাই।
-এত দিন কোথায় ছিলে ?
-আত্মগোপন করেছিলাম এক লুঠ হওয়া আকাশকে উদ্ধার করতে।
-এতদিন বেঁচে ছিলে কোন যাদুতে ?
-সব ধরণের রোগ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে à¦°à§‡à¦–à§‡à¦›à¦¿à¦²à¦¾à¦®à ¥¤ -এখন তো কোনো রোগ নেই। আমরা সবাই দিব্য বেঁচে আছি।
-আছে। রোগ এখন সর্বময়। তোমাদের এই বেচাকেনা আসলে এক লুঠ। তোমাদের সনাতন মাথার অবাধ লুঠ। যারা আকাশ লুঠ করে তোমাদের মাথা তাদের কাছে নস্যি, এ তোমরা বোঝোনা। তোমাদের বোধ ব্যধিগ্রসৠত। ব্যাধিটাই রোগ। রোগটা অতিমারি।

সকলে বিস্মিত হল এই আদি মানুষকে দেখে। লুঠ সম্পর্কে তার à¦•à¦¾à¦²à§‹à¦¤à§à¦¤à§€à¦°à à¦£ ধারণা দেখে। এবং,অতীত ও বর্তমানের কঠিন মারি থেকে তার অবিশ্বাস্ঠসরে থাকা দেখে।

বিস্ময়ে তারা অখণ্ড আকাশ পুনর্বার দেখতে পেল।